(বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল)
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ, ত্রিনিদাদের কুইন্স পার্ক ওভালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এক ঐতিহাসিক জয় অর্জন করে। এই জয়টি শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় সাফল্য ছিল না; এটি ছিল মানজারুল ইসলাম রানা ও সাজ্জাদুল হাসান সেতুর প্রতি দলের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতিফলন। (বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল)
শোকাবহ সূচনা:
ম্যাচের আগের দিন, ১৬ মার্চ ২০০৭, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ দলের দুই উদীয়মান ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা ও সাজ্জাদুল হাসান সেতু। তাদের অকাল প্রয়াণে পুরো দল শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। তবে এই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, কালো ব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ দল, তাদের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে।
ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিং:
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী, যেখানে ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দ্র শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ব্যাটসম্যানরা। তবে বাংলাদেশের বোলাররা সেদিন অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা, আব্দুর রাজ্জাক এবং মোহাম্মদ রফিকের বোলিং তোপে ভারতীয় দল ৪৯.৩ ওভারে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট হয়।
- ম্যাচের আগের দিন দুর্ঘটনায় মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাঠে নেমে সেই শোককে বানিয়ে ছিলেন প্রেরণা। মাশরাফি-ঝড়ে এলোমেলো হয়ে টেন্ডুলকার-গাঙ্গুলী-দ্রাবিড়ের ভারত অলআউট মাত্র ১৯১ রানে। সেটি বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় তামিম, সাকিব ও মুশফিকের তিন ঝলমলে ফিফটিতে। ৫ উইকেটের জয়ে লেখা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুর্দান্ত এক উপাখ্যান। পোর্ট অব স্পেনে ২০০৭ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচ প্রথম আলো থেকে কাভার করেছিলেন উৎপল শুভ্র। পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশিত এই ম্যাচ রিপোর্ট পাঠকদের স্মৃতির ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ১৮ বছর আগের সেই দিনে...
তামিম, সাকিব ও মুশফিকের ব্যাটিং নৈপুণ্য:
১৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে, বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটসম্যানরা দারুণ পারফরম্যান্স করেন। ১৭ বছর বয়সী তামিম ইকবাল তার সাহসী ব্যাটিং দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ৪৮.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
রানার স্মৃতিতে উজ্জীবিত দল:
এই জয়টি ছিল মানজারুল ইসলাম রানা ও সাজ্জাদুল হাসান সেতুর স্মৃতির প্রতি নিবেদিত। তাদের অকাল প্রয়াণে শোকাহত দল সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে মাঠে নেমেছিল। এই জয় তাদের প্রতি দলের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতিফলন ছিল।
২০০৭ সালের এই জয়টি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, দলগত প্রচেষ্টায় অর্জিত এই জয় প্রমাণ করে যে সংকটময় মুহূর্তেও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দিয়ে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
